এআই চ্যাটবট ব্যবহারে কর্মীদের সতর্ক করেছে গুগল

তথ্যপ্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা পরিচালিত চ্যাটবট ব্যবহারে নিজেদের মূল কোম্পানি আলফাবেট ইনক কর্মীদের সতর্ক করেছে গুগল। এমনকি এ ধরনের চ্যাটবটের তালিকায় রয়েছে কোম্পানিটির নিজস্ব চ্যাটবট ‘বার্ড’-এর নামও।

আলফাবেট-এর চারজন কর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অথচ অন্যদিকে গুগল নিজেই জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য বিশ্বব্যাপী বার্ডকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।কর্মীরা যাতে কোম্পানিটির গোপনীয় তথ্যগুলো এআই চ্যাটবটে প্রবেশ না করায়, সে সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে আলফাবেট। মূলত কোম্পানিটি তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিতে দীর্ঘস্থায়ী নীতি গ্রহণের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিয়েছে।

বার্ড ও চ্যাটজিপিটির মতো চ্যাটবটগুলো মূলত ‘জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স’-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলাপাচারিতা চালায় এবং অসংখ্য প্রম্পট বা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে।

ক্ষেত্রবিশেষে চ্যাটবটগুলোর রিভিউয়ারদের এই কথোপকথন পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। এমনকি গবেষকদের মতে, প্রাপ্ত ট্রেনিং অনুযায়ী চ্যাটবটগুলো সংরক্ষণকৃত ডেটা ফের প্রকাশ করতে পারে। যা তথ্য ফাঁস হওয়ার মতো ঝুঁকি তৈরি করবে।

একইসাথে আলফাবেট-এর পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মী জানান, এআই চ্যাটবটের তৈরি করা কম্পিউটার কোড সরাসরি ব্যবহার না করার বিষয়ে কোম্পানির প্রকৌশলীদের সাবধান করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে আলফাবেটের পক্ষ থেকে বলা হয়, বার্ড সাজেশন হিসেবে অপ্রত্যাশিত কোড তৈরি করতে পারে। তবে একইসঙ্গে চ্যাটবটটি প্রোগ্রামারদের জন্য উপকারী বলে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

গুগল বলছে, এটি নিজেদের প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকতে বদ্ধপরিকর।

মূলত মাইক্রোসফটের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গুগল নিজস্ব চ্যাটবট বার্ড বাজারে এনেছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিজেদের চ্যাটবট সম্পর্কিত উদ্বেগগুলো স্বীকার করার মধ্যে দিয়ে গুগল ব্যবসায়িক ক্ষতি এড়াতে চায়।

অন্যদিকে স্যামসাং, অ্যামাজন ও ডয়েচে ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও এআই চ্যাটবট ব্যবহারে বিধি-নিষেধ জারি করেছে। যদিও আরেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের কাছে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অ্যাপলও এআই চ্যাটবট ব্যবহারের কর্মীদের প্রতি বিধি-নিষেধ জারি করেছে বলে জানা গেছে।

গত জানুয়ারিতে প্রায় ১২ হাজার ব্যক্তির ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নেটওয়ার্কিং সাইট ফিশবোল একটি জরিপ পরিচালনা করেছিল। ফলাফলে দেখা যায়, প্রায় ৪৩ ভাগ চাকরিজীবী চ্যাটজিপিটি কিংবা সমজাতীয় চ্যাটবট ব্যবহার করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই ব্যবহার সম্পর্কে অবগত নন।

ইনসাইডার-এর তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৮০টিরও বেশি দেশে প্রায় ৪০টি ভাষায় বার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে।

অন্যদিকে প্রাইভেসি ইস্যুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে বার্ড উন্মুক্তের সময়ও আরও পেছানো হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের ডেটা প্রটেকশন কমিশনের সাথে কোম্পানিটির এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ হচ্ছে।

চ্যাটবট ব্যবহার করে বর্তমানে খুব সহজেই ইমেইল, ডকুমেন্ট কিংবা সফটওয়্যারের কাজ করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ভুল তথ্য সরবারাহ কিংবা কপিরাইট সম্পর্কিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এর আগে গত ১ জুন গুগলের পক্ষ থেকে প্রাইভেসি সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে ‘গোপনীয় কিংবা সংবেদনশীল তথ্য’ বার্ডে কথোপকথনের সময় ইনপুট হিসেবে দিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

এছাড়াও গুগল ও মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে বিজনেস কাস্টমারদের জন্য কথোপকথনের আলাদা টুলস প্রস্তুত করা হয়েছে। তুলনামূলক ব্যয়বহুল এই টুলগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাবলিক এআই মডেলগুলোর মতো ডেটা সংরক্ষিত হবে না।

বর্তমানে চ্যাটজিপিটি ও বার্ডের ডিফল্ট সেটিং অনুসারে ব্যবহারকারীদের কথোপকথন সংরক্ষণ করা হয়, যা ব্যবহারকারীরা পরবর্তীতে চাইলে মুছে ফেলতে পারেন।

মাইক্রোসফটের কনজ্যুমার চিফ মার্কেটিং অফিসার ইউসুফ মেহদী বলেন, ‘এটা খুবই যুক্তিসঙ্গত যে, কোম্পানিগুলো নিজেদের কর্মীদের পাবলিক চ্যাটবট ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে চায়। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যথাযথভাবে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিচ্ছে।’

কর্মীদের পাবলিক এআই প্রোগ্রামে গোপনীয় তথ্য ইনপুটে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কি না সে সম্পর্কে মাইক্রোসফটের কাছে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। যদিও কোম্পানিটির নির্বাহী পদে থাকা একজন জানান, তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগেই অনুরূপ ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *